Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২০ August ২০২২

ইতিহাস

সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ২২ জুন ১৮৬৩ খ্রি. তারিখে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। ৫টি ওয়ার্ড নিয়ে ৬ বর্গমাইল বিস্তৃত চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটির প্রথম প্রশাসক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন মি. জে.ডি ওয়ার্ড। ২৭ জুন ১৯৭৭ খ্রি. তারিখে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি নাম পরিবর্তন করে চট্টগ্রাম পৌরসভা করা হয় এবং জনাব ফজল করিম  চট্টগ্রাম পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮২ খ্রি. তারিখে চট্টগ্রাম পৌরসভাকে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে উন্নীত করে ব্রিগেডিয়ার জনাব মফিজুর রহমান চৌধুরীকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে ৩১ জুলাই ১৯৯০ খ্রি. তারিখে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন নামের পরিবর্তন করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন করা হয় এবং জনাব মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীকে মেয়র হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। তৎপরবর্তীতে ১৯৯১ সাল হতে ১৯৯৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত জনাব মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন মেয়রের দায়িত্বপালন করেন। ১৯৯৪ সালে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জনাব এ.বি.এম. মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রথম নির্বাচিত মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে টানা ১৭ বছর মেয়রের দায়িত্বপালন করেন। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত ৪র্থ পরিষদে জনাব মোহাম্মদ মনজুর আলম এবং ৫ম পরিষদে জনাব আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন মেয়র হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। সর্বশেষ বিগত ২৭ জানুয়ারি ২০২১ খ্রি. তারিখে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জনাব মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী ৬ষ্ঠ পরিষদের মেয়র হিসেবে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন।

বিস্তারিত ইতিহাস

চট্টগ্রামের ভৌগোলিক পরিচিতি

পাহাড়, সমুদ্র, নদী, উপত্যকা ও সবুজ অরণ্যবেষ্টিত প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভীমি প্রাচ্যের রানি খ্যাত চট্টগ্রাম শুধু বাংলাদেশের নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যেই একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য এ- জেলা ও শহরকে এক অনবদ্য স্থানে পরিণত করেছে। চট্টগ্রামের বর্তমান সীমানা পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের মোহনীয় তটরেখা, উত্তরে ফেনী নদী ও ভারত, পূর্বে পার্বত্য জেলাসমূহ ও দক্ষিণে কক্সবাজার জেলা। বিশ্ব মানচিত্রে চট্টগ্রামের অবস্থান বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্ত সীমার ২০-৩৫' থেকে ২২-৫৯' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১-২৭' থেকে ৯২-২২'  পূর্ব দ্রাঘিমাংশ বরাবর।

চট্টগ্রামের নামকরণ

চট্টগ্রাম নামের প্রকৃত উৎস সম্বন্ধে রয়েছে নানান বৈচিত্র ও মতভিন্নতা। ‘চট্টগ্রামে মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত জনশ্রুতি থেকে জানা যায় যে, প্রাচীনকালে চট্টগ্রাম ছিল জিন-পরি অধ্যুষিত দেশ। পীর বদর শাহ এখানে আগমন করে অলৌকিক চাটির (মৃৎ-প্রদীপ) আলোর সাহায্যে জিন-পরি বিতাড়িত করার ফলে এই স্থানে নাম হয় চাটিগাঁ।’

কারো মতে, চট্টগ্রাম শব্দটি এসেছে আরাকানি ভাষা থেকে। চট্টগ্রাম এক-সময় আরাকান রাজ্যভুক্ত ছিল। আরাকানি ভাষাভাষীরা চট্টগ্রামকে  ‘চইট্টে গং’ বলে অভিহিত করে। ‘চইট্টে গং’ শব্দের অর্থ শক্তিশালী বা শ্রেষ্ঠ বা প্রধান সেনানিবাস বা দুর্গ। পরিব্রাজক ইবনে বতুতা তাঁর রচনায় চট্টগ্রামকে সুদকাওয়ান নামে উল্লেখ করেছেন। এরকম প্রায় চৌদ্দটি শব্দ আলোচিত হয়েছে চট্টগ্রাম নামের উৎস সম্বন্ধে। ‘চৈত্যগ্রাম’, ‘চতুৎগ্রাম’ ‘চট্টল’, ‘শ্যাৎগাঙ্গ’, ‘চিৎ-তৌৎ-গৌং’, ‘চাটিগ্রাম’, ‘চতকাঁও’ ‘চাটিকিয়াং’, ‘শাতজাম’, ‘চাটিগান’, ‘জেটিগা’, ‘চইট্টেকুং’ ইত্যাদি। ইংরেজদের কাছে চট্টগ্রাম শব্দটি রূপ লাভ করে চিটাগং।

 

চট্টগ্রামের ইতিহাস

বেশ কয়েকটি যুগ পার করেছে আজকের এই চট্টগ্রাম।

প্রাগৈতিহাসিক যুগ

চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুল্ড পাহাড়ে প্রাগৈতিহাসিক যুগের নিদর্শন আবিষ্কার প্রমাণ করে যে, চট্টগ্রাম পৃথিবীর সুপ্রাচীন দেশ। আট থেকে দশ হাজার বছর আগে এখানে মানুষ বসতি গড়ে তুলেছে। কিংবদন্তিমতে, মহাভারতীয় যুগে কর্ণের পুত্র বিকর্ণ চট্টগ্রাম শাসন করেছিলেন।

 

ঐতিহাসিক যুগ

ঐতিহাসিক যুগের সুচনাকালে চট্টগ্রাম ক্রমান্বয়ে দক্ষিণ -পূর্বাঞ্চলে বিস্তৃত ঘটে এবং বার্মার আরাকানের সাথে একীভূত হয়ে একটি রাজ্যে পরিণত হয়। ষষ্ঠ শতকে চট্টগ্রাম বাংলার প্রাচীন জনপদ সমতট রাজ্যভুক্ত হয়। অষ্টম-নবম শতকে মুসলমান আরব বণিকদের চট্টগ্রামে আগমন শুরু হয়। নবম শতকে অন্তর্ভুক্ত হয় হরিকেল সাম্রারাজ্যের। দশম শতকে চট্টগ্রাম পুনরায় আরাকান রাজ্যভুক্ত হয়। তুর্কি তাতার খান চট্টগ্রাম দখল করলেও চতুর্দশ শতকের প্রথম দিকে চট্টগ্রাম পুনরায় আরাকান রাজ্যভুক্ত হয়।

 

সুলতানি আমল

চতুর্দশ শতকে তৎকালীন বাংলার রাজধানী সোনার গাঁ-র স্বাধীন সুলতান ফখরউদ্দীন মুবারক শাহ চট্টগ্রাম জয় করে মুসলিম সালতানাতের অধীনে শাসন শুরু করেন। এ -সময়ে আফ্রিকার বিখ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বতুতা চট্টগ্রাম সফরে আসেন এবং চট্টগ্রামকে সৃষ্টির অপরূপ সৌন্দর্যের  নগর ও প্রাচ্যের শ্রেষ্ঠ বন্দর হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। ১৩৪২ সালে বাংলার শ্রেষ্ঠ স্বাধীন সুলতান শাসসুদ্দিন ইলিয়াছ শাহ ক্ষমতাগ্রহণের পর চট্টগ্রাম বন্দরকে তৎকালীন বঙ্গদেশের একক বন্দররূপে প্রতিষ্ঠা করেন। গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ চট্টগ্রামেই প্রতিষ্ঠা করেন টাকশাল, এরপর ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইলিয়াস শাহি বংশের অধীনে রাস্তি খাঁ ও পুত্র পরাগল খাঁ চট্টগ্রাম শাসন করেন, এ -সময় চট্টগ্রামের শাসন কেন্দ্র ছিল হাটহাজারীর জোবরা গ্রামে।

১৫১৭ সালে প্রথম পর্তুগিজ বণিকদের আগমন ঘটে এই বন্দর চট্টগ্রামে।

 

মোঘল আমল

১৬৬৬ সালে বাংলার মোঘল শাসক শায়েস্তা খান তাঁর পুত্র বুজুর্গ ওমেদখানের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিজয় সম্পন্ন করেন এবং এ অঞ্চলের নাম রাখেন ইসলামাবাদ। ১৭৬১ সাল পর্যন্ত ৩২ জন নবাব বা শাসনকর্তা চট্টগ্রাম শাসন করেন।

 

ইংরেজ আমল

১৭৫৭ সালে পলাশির আম্রকাননে বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদদৌলার পরাজয়ের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের রাজনৈতিক আধিপত্যকে সুদৃঢ় করতে লাভজনক অর্থনৈতিক জোন হিসেবে বেছে নেয় চট্টগ্রামকে। ১৭৬০ সালে নবাব মির কাসিমের সাথে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চুক্তি অনুযায়ী ১৭৬১ সালে ৫ জানুয়ারি চট্টগ্রামের মোঘল যুগের শেষ শাসক নবাব মির মোহাম্মদ রেজা খান প্রথম ইংরেজ চিফ হ্যারি ভেরলেস্টকে চট্টগ্রামের শাসনভার বুঝিয়ে দেন। এভাবে চট্টগ্রাম থেকেই মূলত শুরু হয় ব্রিটিশ শাসনের যুগ।

ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি চট্টগ্রামকে নয়টি চাকলায় বিভক্ত করে নয়জন চাকলাদার নিযুক্তির মাধ্যমে চট্টগ্রামে প্রশাসনিক ও রাজস্ব কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে।

 

 

চট্টগ্রাম পৌরসভার গোড়াপত্তন

উপমহাদেশে ব্রিটিশ উপনিবেশ শাসনের প্রায় একশো বছর অতিক্রান্ত হলে চট্টগ্রামের ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় নগরায়ণের আবশ্যকতা উপলব্ধি করে ব্রিটিশ সরকার ১৮৬৩ সালের ২২ জুন চট্টগ্রাম পৌরসভা স্থাপন করে। তবে সন এবং তারিখ নিয়ে চট্টগ্রামের ইতিহাস লেখকদের মধ্যে ন্যূনতম তিনটি মতভিন্নতা থাকলেও চট্টগ্রাম পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন নথিপত্রে ২২ জুন ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দ মর্মে উল্লেখ রয়েছে। একারণে বর্তমান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ সর্বসম্মতভাবে ২২ জুন ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দকে চট্টগ্রাম পৌরসভা প্রতিষ্ঠার সন-তারিখ হিসেবে গ্রহণ করে।

 

চট্টগ্রাম পৌরসভার সংক্ষিপ্ত চিত্র

বিধিবদ্ধ মিউনিসিপ্যাল বোর্ড গঠিত হওয়ার পূর্বে ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের  ১৪ই মে তারিখে, ‘কমিটি ফর দি স্যানিটারি ইমপ্রুভমেন্ট অব দি টাউন অব চিটাগাং’  গঠিত হয়। বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কমিশনার সিস্টিয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় সদস্য হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সিচাপম্যান, ডব্লিউবিবিটসন, জেস্প্যাঙ্কি, এইচজেবেম্বার, ডব্লিউএইচহেণ্ডারসন, জি সিফ্লেচার, ঠাকুর বক্স তেওয়ারি ও হরচন্দ্র রায়।

১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে মিউনিসিপ্যালিটির প্রশাসন ও কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১৮ জন কমিশনারের সমন্বয়ে একটি পরিষদ গঠিত হয়। এই পরিষদের দু-জন নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হতেন, পাঁচ-জন কর্তৃপক্ষের পছন্দমতো অন্তর্ভুক্ত হতেন। একজন প্রাক্তন সরকারি কর্মচারি পরিষদের কমিশনার পদে নিযুক্ত হতেন। বাকি দশটি কমিশনার পদে বিভিন্ন প্রশাসনে নিযুক্ত উচ্চপদস্থ ইংরেজ অফিসার নিয়োজিত থাকতেন।

সে সময়ে চট্টগ্রাম শহরের সাড়ে চার বর্গমাইল এলাকা মিউনিসিপ্যালিটির আওতাধীন  ছিল। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে (উনত্রিশে ডিসেম্বর), ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে এবং ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে (১৮ই এপ্রিল) বেঙ্গল গভর্নমেন্ট হুকুমানুসারে কতক অংশ গ্রহণ-বর্জন করা হলেও পৌর এলাকা উল্লেখিত আয়তনেই নির্দিষ্ট থাকে।

চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি প্রথকদিকে চারটি ওয়ার্ড বিভক্ত ছিল। পরে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে আরো একটি ওয়ার্ড করা হয়। এই ওয়ার্ডগুলি এ. বি.সি.ডি. ইঅঞ্চলে বিভক্ত করা হয়। চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি তার সূচনাকাল থেকেই শহরের অধিবাসীদের কাছ থেকে আসাম -বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানির হোল্ডিং ও জেটি কর, গৃহায়ণ কর, ভূমি কর এবং ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে পয়ঃনিস্কাশন কর আদায় করতে শুরু করে।

প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ১৯০১-২ খ্রিস্টাব্দ অবধি মিউনিসিপ্যালিটির বাৎসরিক গড় আয় দাঁড়ায় ৫৮ হাজার টাকা। আর আলো, রাস্তা নির্মাণ পয়ঃপ্রণালী নির্মাণসহ বিভিন্ন গড় ব্যয় হয় ৫১ হাজার টাকা। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে টোল কর এবং ফেরি কর আরোপ করা হয়। ওই বছর রাস্তা ও আস্তি মাহমুদ ফেরি ঘাটের কর বাবদ আয় হয় ৬৫০০ টাকা। ১৯০৫-৬ খ্রিস্টাব্দে বিভিন্ন খাতে কর আদায়ের সফলতার কারণে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি পূর্ববঙ্গে প্রথম সরকারি অর্থ সাহায্যের তালিকায় নথিভুক্ত হয়। এই সময়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ও রাস্তায় বাতির ব্যবস্থা উন্নয়নের উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়।

প্রথমদিকে শহরের পানি সরবরাহের উৎস ছিল প্রাকৃতিক উপায়ে নিঃসারিত ঝরনা (যেমন  বদর ঝরনা, দোনালি ঝরনা, মাছুয়া ঝরনা ইত্যাদি)। সেসব ঝরনা থেকে নলের সাহায্যে বকশির হাট জলধারে পানি তুলে নেয়া হতো। তারপর বিতরণ করা হতো। কিন্তু জনগণের পানির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়াতে ১৯১৫ সালে আধুনিক প্রক্রিয়ায় পানি পরিশোধন ও বিতরণ ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কারমাইকেল চট্টগ্রামে এসে এই আধুনিক পানি পরিশোধন প্রক্রিয়া ও গভীর নলকূপটির প্রথম পানি সরবরাহের সূচনা করেন এবং শহরের ২৯ হাজার লোকের পানির চাহিদাও পূরণ হয়।

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ অবধি নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা পূরণ ও রাস্তাঘাট উন্নয়নে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে।

১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারিতে দেখা যায় তখন শহরের মিউনিসিপ্যালিটির আওতাভুক্ত এলাকার মোট জনসংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ১৯ হাজার, এর মধ্যে ৮৬ হাজার পুরুষ ও ৩৩ হাজার নারী। তখন শহরের মধ্যে হলেও রেলওয়ে কলোনি, পাহাড়তলি, পতেঙ্গা, আগ্রাবাদ ইত্যাদি এলাকা মিউনিসিপ্যালিটির এলাকাধীন ছিল না। মিউনিসিপ্যালিটির আওতা বহির্ভূত ওই শহর এলাকায় জনসংখ্যা ছিল দেড় লক্ষ। তার মধ্যে ৯০ হাজার পুরুষ ও ৬০ হাজার নারী । তখন শহরে শিক্ষিতের হার ছিল ৩৫ শতাংশ। মোহাজেরদের সংখ্যা ছিল ১৮০০০।

১৯৪৮- এর পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন খাত থেকে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটির আয় বৃদ্ধি হয়ে দাঁড়ায় ১০,৩৬,০৬৩ টাকা এবং দশ বছর পরে এই আয় দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে ৪৩,৮৩,২৭২ টাকায় পৌঁছে যায়। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দ থেকে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি কমিটি প্রতি বছরই সরকারি অনুদান লাভ করতে থাকে। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে মিউনিসিপ্যাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অর্ডিন্যান্স -এর ধারা অনুযায়ী নতুনভাবে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি পুনর্গঠিত হয়। ১৯৬১-র পরিসংখ্যানে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি এলাকার লোকসংখ্যা ১৯০,৪১৪ জনে উন্নীত হয়।

১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদের ১৪ জন প্রতিনিধিসহ ১৫০ জন সদস্য, একজন চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে নতুন পরিষদও গঠিত হয়। এ ছাড়া এক জন বেতনভুক্ত স্থায়ী সচিব, জনসংযোগ অধিকর্তা, স্বাস্থ্য অধিকর্তা, ১৪ জন সুপারভাইজার, একজন প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী, ভারপ্রাপ্ত ওভারসিয়ার, দুইজন ওভারসিয়ার, শিক্ষা অধিকর্তা, মহিলা শিক্ষা পরিদর্শক ও দুইজন অভ্যর্থনা অধিকর্তা নিয়োগ করা হয়।

স্বাধীনতা যুদ্ধোত্তরকাল থেকে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটির নিয়ন্ত্রণাধীনে ছিল জেনারেল হাসপাতালস্থিত ১৪ শয্যা বিশিষ্ট একটি কলেরা নির্মূল বিভাগ, অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ ও নির্মূল ব্যবস্থা, ২টি ঔষধ বিতরণ কেন্দ্র, ১টি কসাইখানা, ৮টি উদ্যান, ২৭২টি পাকা ও কংক্রিট বাঁধানো রাস্তা, শ্মশান ও ১টি কবরখানা এবং শিক্ষা উন্নয়নকল্পে ২৪টি প্রাথমিক বালক,২৩টি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়, ২৩টি নিম্ন মাধ্যমিক বালক স্কুল,৬টি নিম্নমাধ্যামিক বালিকা বিদ্যালয় এবং ১টি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। শিক্ষা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম মিউসিনিপ্যালিটি একটি ব্যতিক্রমী ভুমিকা পালন করেছে। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা চালূ হয়, ১৯২৮-এ তা বাধ্যতামূলক করা হয়। ১৯৩২-এ অবৈতনিক বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হয় এবং ১৯৪০ -এ বালিকাদের অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষাকে আবশ্যিক করা হয়। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে নিম্নমাধ্যমিক শিক্ষাও বাধ্যতামূলক পর্যায়ে উন্নীত করা হয়।

চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই সেপ্টেম্বর কর্পোরেশনে পরিণত হয়। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ৩১-এ জুলাই সিটি কর্পোরেশনের রূপ লাভ করে। পুরানো এলাকা সম্প্রসারিত হয়ে ৬০ বর্গমাইলে বিস্তৃতি লাভ করে।

একনজরে চট্টগ্রাম পৌরসভার ক্রমবির্বতন

স্থাপিত ২২-এ জুন ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দ

১ম চেয়ারম্যান

:

মিস্টার জে. ডি. ওয়ার্ড (জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, চট্টগ্রাম)

১ম নির্বাচিত চেয়ারম্যান

:

মরহুম খানবাহাদুর আবদুচ ছত্তার

চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন

উন্নীত হওয়ার তারিখ

:

২৩-এ সেপ্টেম্বর’১৯৮২ খ্রিস্টাব্দ

এই সময় প্রশাসক ছিলেন

:

ব্রিগেডিয়ার মফিজুর রহমান চৌধুরী

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন

উন্নীত হওয়ার তারিখ

:

৩১-এ জুলাই’ ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দ

এই সময় মেয়র ছিলেন        

:

মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী

১ম নির্বাচিত মেয়র

:

আলহাজ্ব এ.বি.এম’ মহিউদ্দিন চৌধুরী

নির্বাচনের তারিখ

:

৩১-এ জানুয়ারি’ ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত তথ্য

১ম নির্বাচন

:

৩১ জানুয়ারি’ ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দ

নির্বাচিত মেয়র

:

আলহাজ্ব এ.বি.এম. মহিউদ্দিন চৌধুরী

গেজেট প্রকাশ

:

১০ ফেব্রুয়ারী’ ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দ

শপথগ্রহণ

:

১০ মার্চ ’১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দ

দায়িত্বগ্রহণ

:

১১ মার্চ ’১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দ

 

২য় নির্বাচন

:

৩ জানুয়ারি’ ২০০০ খ্রিস্টাব্দ

নির্বাচিত মেয়র

:

আলহাজ্ব এ.বি.এম’ মহিউদ্দিন চৌধুরী

গেজেট প্রকাশ

:

৩ এপ্রিল’ ২০০০ খ্রিস্টাব্দ

শপথগ্রহণ

:

২ মে’ ২০০০ খ্রিস্টাব্দ

দায়িত্বগ্রহণ

:

২ মে’ ২০০০ খ্রিস্টাব্দ

 

৩য় নির্বাচন

:

৯ মে’ ২০০৫ খ্রিস্টাব্দ

নির্বাচিত মেয়র

:

আলহাজ্ব এ.বি.এম’ মহিউদ্দিন চৌধুরী

গেজেট প্রকাশ

:

১১ মে’ ২০০৫ খ্রিস্টাব্দ

শপথগ্রহণ

:

২ জুন’ ২০০৫ খ্রিস্টাব্দ

দায়িত্বগ্রহণ

:

২ জুন’ ২০০৫ খ্রিস্টাব্দ

 

৪র্থ নির্বাচন

:

১৭ জুন’ ২০১০ খ্রিস্টাব্দ

নির্বাচিত মেয়র

:

মোহাম্মদ মনজুর আলম

গেজেট প্রকাশ

:

২১ জুন’ ২০১০ খ্রিস্টাব্দ

শপথগ্রহণ

:

১৮ জুলাই’ ২০১০ খ্রিস্টাব্দ

দায়িত্বগ্রহণ

:

২০-এ জুলাই’ ২০১০ খ্রিস্টাব্দ

 

৫ম নির্বাচন

:

২৮ এপ্রিল’ ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ

নির্বাচিত মেয়র

:

আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন

গেজেট প্রকাশ

:

৩০ এপ্রিল’ ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ

শপথগ্রহণ

:

৬ মে’ ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ

দায়িত্বগ্রহণ

:

২৬ জুলাই’ ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ

 

৬ষ্ট নির্বাচন

:

২৭ জানুয়ারি’ ২০২১ খ্রিস্টাব্দ

নির্বাচিত মেয়র

:

মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী

গেজেট প্রকাশ

:

৩১ জানুয়ারি’ ২০২১ খ্রিস্টাব্দ

শপথগ্রহণ

:

১১ ফেব্রুয়ারি’ ২০২১ খ্রিস্টাব্দ

দায়িত্বগ্রহণ

:

১৫ ফেব্রুয়ারি’ ২০২১ খ্রিস্টাব্দ